সমগ্র গীতগোবিন্দের প্রথম ডি়জিটাল সংকলন

Kolkata / June 14, 2023

কলকাতা১৪ জুন: দীর্ঘ পাঁচবছর নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করা গিয়েছে নতুন যুগের উপযোগী এক শৈল্পিক সৃষ্টি। প্রকৃত কত্থকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ গীতগোবিন্দ সর্বপ্রথম তুলে ধরা হয়েছে। এটা যে কোনও নৃত্যশৈলীর সঙ্গে তুলনায় নজির সৃষ্টি করেছে।

গীতগোবিন্দতে সবমিলিয়ে ২৪টি গান আছে। দ্বাদশ শতকে গীতগোবিন্দ রচিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষাতে। বিশ্বসাহিত্যে গীতগোবিন্দ নিজের আসন প্রতিষ্ঠা করেছে। উত্তর ভারতীয় ঘরানায় গীতগোবিন্দের অন্তর্গত ২৪টি সঙ্গীতই উপস্থাপিত হয়েছে, পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন গুরু ড. পালি চন্দ্রা তাঁর দলকে সঙ্গে নিয়ে। কেরালাভিত্তিক  নাট্যসূত্র-ইনভিস টিম একহাজার দিনে অন্তত ২০০জন মানুষকে টিমের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটা নাট্যসূত্র অনলাইন কমের (Natyasutraonline.com ) কৃতিত্ব, যা নিজস্বভাবে অর্জিত। নাট্যসূত্র অনলাইনে সম্পূর্ণ কোরিওগ্রাফি প্রদর্শিত আছে। এতে আছে গীতগোবিন্দের ২৪টি মাস্টারপিসই। এখানে যমুনা তীরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং সখীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীরাধার প্রণয়ের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশনের জন্যে ডিজিটাইজড কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানগুলি সাবস্ত্রাইব করা যেতে পারে বিভিন্ন সময়সীমার জন্য। নাট্যসূত্রের কনটেন্ট পেতে হলে সাবক্রাইবের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সময়সীমা একবছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত।

ভবিষ্যতে উপভোক্তা হিসেবে পেশাদার নৃত্যশিল্পী থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী এবং সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজন থাকবেন। একথা জানিয়েছেন সুইজারল্যান্ড নিবাসী গুরু ড. পালি চন্দ্রা। ড. পালি চন্দ্রা প্রসিদ্ধ দুই গুরু বিক্রম সিংঘে এবং গুরু কপিলা রাজের আর্শীবাদধন্যা, কাছের শিষ্যা। লখনউয়ে জন্ম ওঁর। কত্থককে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রসিদ্ধিলাভ করেছেন কত্থকের গ্লোবাল অ্যাম্বাসাডর হিসেবেও।

অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হয়েছে নাট্যসূত্র এবং অভিনয় দর্পণের ওপর ভিত্তি করে। এটা সুচিন্তিত কারণেই করা হয়েছে্, যাতে অন্য নৃত্যধারার ছাত্রছাত্রীরা স্ব স্ব নৃত্যধারাগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই কনটেন্টগুলি ব্যবহার করতে পারেন,  শিক্ষার্থীরা মূল বিষয়ের সবদিকই যাতে আত্মস্থ করতে সক্ষম হন।

সর্বতোভাবে এই কাজে সহযোগিতা করবেন গুরু ড. পালি চন্দ্রা। সহায়তার জন্যে একবিংশ শতাব্দীতে সময়োপযোগী রূপান্তরের কাজও করেছেন সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী। জয়দেব অষ্টপদীকে অথবা আটটি শ্লোকের সমাহারকে একেকটি সঙ্গীত রচনার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। সুপ্রাচীন, ঐতিহ্যশালী ওই নকশার কোনও রদবদলও ঘটানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ক্লাসে সেই প্রাচীন নকশাই অনুসরণ করা হয়। প্রত্যেক ক্লাসেই সাবলীলভাবে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি কোরিওগ্রাফি সম্পর্কিত টিপস দেওয়া আছে। এমনভাবে শেখানোর পদ্ধতি সাজানো হয়েছে , শিক্ষার্থীরা যেন জীবন্ত এবং ক্রিয়াশীলভাবে কাব্যের উপজীব্য উপলব্ধি করতে পারেন।

গুরু ড, পালি চন্দ্রা শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন মঞ্চ উপস্থাপনার বিষয়ও । সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই, শেখানোর সময়ে কোরিওগ্রাফি সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি, যেমন কোরিওগ্রাফির অর্থ সূক্ষ্মভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। নাচের ক্ষেত্রে শব্দভাণ্ডার এবং রচিত সঙ্গীত সম্পর্কেও বিশদে বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের সারমর্ম অনুধাবন করানোর ব্যবস্থা প্রশিক্ষণেরই অন্তর্গত।

সঙ্গীতগুলি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। রচিত সঙ্গীতগুলি নানা প্ৰেক্ষিতে উপলব্ধি করানোর জন্যে দেওয়া আছে সাব-টাইটেল, যাতে সংস্কৃতের আক্ষরিক অর্থ বুঝতে কোনও সমস্যা না হয়। সংস্কৃত শ্লোকগুলির প্রকৃত অর্থ জানাতে 'পোয়েম ইন অ্যাকশন' শীর্ষক পৃথক একটি বিভাগও আছে।

ফলে সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রকৃত রচনা বোধগম্য হবে শিক্ষার্থীদের। এই বিভাগে গুরু ড. পালি চন্দ্রা গীতগোবিন্দের নির্যাস ও মাধুর্য উপস্থাপনা করেছেন সুচারু অভিনয়ের মাধ্যমে । এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে একটি অডিও ভাষ্য, যার মাধ্যমে ধ্রুপদী ওই রচনা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। পারফরম্যান্স গোড়া থেকে শেষপর্যন্ত ইংরেজি সাব-টাইটেলের মাধ্যমে সহজবোধ্য করা হয়েছে। এজন্যে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়েছে, যেহেতু ইংরেজি ভাষা বিশ্বজনীন। এবিষয়টি শিক্ষাপ্রদানের সময়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংস্কৃত স্লোকগুলির অর্থ বিশদে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ইংরেজিতেই।

গীতগোবিন্দের অনুসারী কিছু প্রকল্প এবার বাস্তবায়িত করতে চলেছে নাট্যসূত্র। এর মধ্যে রয়েছে কফি টেবিলের মতো আকারে ই-বুক প্রকাশ থেকে শুরু করে মুরাল পেইন্টিং, দেওয়ালে ডেকোরেশন অখবা দুর্লভ শিল্পসামগ্রী এবং দেশীয শিল্পের প্রদর্শনী।

নিরন্তর পরিবর্তিত হয়েছে জয়দেবের পৃথিবী, বদলেছে আকাঙ্খার কাহিনি আর পরিপূর্ণতার গল্প। সেই বেদনাময় পূর্ণতা একালেও সত্য। এমনই বিশ্বাস করেন গুরু ড. পালি চন্দ্রা।

ভগবান কৃষ্ণ ও শ্রীরাধার প্রাচীন ভারতীয় উপাখ্যান, আদতে তা  ভালোবাসা, জীবন ও বিশ্বাসের কাহিনি। একথাও মনে করেন গুরু ড. পালি চন্দ্রা। এও মনে করেন, গীতগোবিন্দের প্রভাব যুব প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে । গীতগোবিন্দের প্রভাব উপমহাদেশের বাইরে নৃত্য ও সঙ্গীতের জগতে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে এক অমূল্য রেফারেন্স উপহার দেবে।

 

 

Photo Gallery

+
Content
+
Content
+
Content